বর্তমান বিশ্বে ইয়াজুজ মাজুজ কারা?

রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর ইন্তেকালের কিছুদিন পরের ঘটনা। খাযার নামে একটি জনগোষ্ঠী ইহুদি ধর্ম গ্রহন করে। অত্যন্ত অদ্ভুতভাবে বিশ্বে প্রথমবারের মত একটি নন-সেমিটিক জনগোষ্ঠী ইহুদি হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরা ধর্মীয় নয় বরং রাজনৈতিক সুবিধা লাভের জন্য মূলত ইহুদি ধর্ম গ্রহন করে। এই সাদা চামড়ার ইউরোপিয়ান ইহুদিরা যাদের নাকি সেমিটিক ইহুদি বনী ইসরাইলদের সাথে কোন বংশগত বা জিনগত সম্পর্ক নেই, তারা প্রচুর পরিমাণে নিজেদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে। এতটাই যে আজ প্রতি ১০ দশ জন ইহুদির মধ্যে ৯ জন, ৯০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশী হল ইউরোপিয়ান খাযার ইহুদি। যদি আমরা নোবেল প্রাইজের লিস্টের দিকে তাকাই তবে দেখতে পাব যে এই ইউরোপিয়ান ইহুদিরা সমগ্র মানবজাতিকে সংখ্যায় বিশালভাবে ছাড়িয়ে গিয়ে লিস্টের সর্বোচ্চ পজিশনগুলোতে অবস্থান করছে। বুদ্ধিবৃত্তি, প্রতিভা, উদ্ভাবনী ক্ষমতা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা এসব কাজে এরা সমস্ত জাতিকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে গেছে। এই খাযারদের জেনেটিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে অনেক রিসার্চ ও মেডিকাল কনফারেন্স হয়েছে যা তাদের জেনেটিক গঠন স্টাডি করার জন্য আয়োজন করা হয়। সমগ্র মানবজাতির মধ্যে এদের জেনেটিক বিন্যাস একেবারে ভিন্নধর্মী।

খাযার ইহুদিদের মধ্যে অনেকে আবার খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহন করে। এই খাযার ইহুদি আর খ্রিস্টানরা মিলে একটি ইহুদি খ্রিস্টান এলায়েন্স তৈরি করে যা অবশেষে জায়নিস্ট মুভমেন্টের জন্ম দেয়। জায়নিস্ট মুভমেন্টের সাথে ইহুদি ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই, এটা একটা ইউরোপিয়ান উদ্ভাবন। এই ইহুদি খ্রিস্টান খাযাররা ইউরোপ ও সেন্ট্রাল এশিয়া নিয়ে গঠিত একটি অত্যন্ত শক্তিধর সাম্রাজ্য তৈরি করে যার নাম খাযারিয়া (Khazaria)। যখন মুসলিম আর্মি একই সাথে পৃথিবীর দুইটি সুপারপাওয়ার – পারসিক সাম্রাজ্য ও বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যকে পরাজিত করে, তখন খাযারদের সামনে তারা থমকে যায়, খাযারদের তারা হারাতে পারেনি। অতএব খাযার সাম্রাজ্যের কাছে এমন একটি সামরিক শক্তি ছিল যা ছিল ঐ সময়কার পৃথিবীতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী।

পরবর্তীতে এই খাযার ইহুদিরা তাদের খাযারিয়া সাম্রাজ্য থেকে বের হয়ে পূর্ব ইউরোপ ও রাশিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে এবং সমুদ্র পাড়ি দিয়ে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছায়। ইউরোপ ছিল একটি খ্রিস্টান সাম্রাজ্য যাকে বলা হত ক্রিসেন্ডম। ইউরোপের আমূল পরিবর্তনে যেসব রেভল্যুশন ভূমিকা পালন করে যেমন – ফ্রেঞ্চ রেভল্যুশন, বলশেভিক রেভল্যুশন এসবের মূলে ছিল খাযার ইহুদি ও খ্রিস্টানরা যারা এসব রেভল্যুশনের মধ্য দিয়ে ক্রিসেন্ডমের পতন ঘটায় ও আধুনিক পশ্চিমা সভ্যতার সূচনা করে। আধুনিক পশ্চিমা সভ্যতা সারা পৃথিবী থেকে ধর্মীয় রাষ্ট্র ও ধর্মীয় বিশ্বাসকে উৎখাত করেছে এবং সমগ্র পৃথিবীর ভূমি, নৌপথ ও আকাশকে নিজেদের বশীভূত করে নিয়েছে যা তাদের আগে কেউই করতে পারে নি। ব্যাংকিং ব্যবস্থার ইতিহাস পড়লেও দেখা যায় যে ইউরোপের ইহুদিরাই সারা পৃথিবীতে সুদের কারবার ছড়িয়ে দিয়েছে এবং পৃথিবীর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো তারাই নিয়ন্ত্রণ করে। আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভও ইহুদিরা চালায় ও আমেরিকান ডলার তারাই ছাপায়। আমেরিকান কংগ্রেস তারাই নিয়ন্ত্রণ করে। জাতিসংঘ, আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এসব তাদেরই নিয়ন্ত্রণে। সারা পৃথিবীতে তারা সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করে রেখেছে। আধুনিক পশ্চিমা সভ্যতার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ও প্রযুক্তিগত শক্তি পৃথিবীতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। আর আধুনিক পশ্চিমা সভ্যতার মূল নিয়ন্ত্রণশক্তি খাযারদের হাতেই। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, “আমি এমন শক্তিশালী কিছু বান্দাকে সৃষ্টি করেছি, যাদেরকে আমি ছাড়া অন্য কেউ ধ্বংস করতে পারবে না”।

এই ইউরোপিয়ান ইহুদিরাই আজকের ইসরাইল রাষ্ট্র গঠন করেছে এবং ইসরাইল রাষ্ট্রের ক্ষমতা তারাই নিয়ন্ত্রণ করে, বাদামী রঙের বনী ইসরাইলরা নয়। বনী ইসরাইল ইহুদিরা হল দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের মত। সারা পৃথিবীর ইহুদিদেরকে ইসরাইল রাষ্ট্রে তারাই ফিরিয়ে এনেছে। সূরা আম্বিয়ার ৯৫-৯৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, “এবং যে শহরকে (জেরুজালেম) আমি ধ্বংস করে দিয়েছি, তার অধিবাসীদের ফিরে না আসা অবধারিত; যে পর্যন্ত না ইয়াজুজ মাজুজকে বন্ধনমুক্ত করে দেওয়া হবে এবং তারা সব দিকে ছড়িয়ে পড়বে”। ইহুদিদেরকে পবিত্রভূমি থেকে মহান আল্লাহ বহিষ্কার করে দেন সেই ২০০০ বছর আগে যখন তারা ঈসা (আঃ) কে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিল। তখন থেকে তারা আর কখনোই জেরুজালেমে স্থায়ীভাবে ফিরে আসতে পারেনি ও জেরুজালেমকে নিজেদের বলে দাবি করতে পারে নি। ২০০০ বছর পর বনী ইসরাইল ঠিকই জেরুজালেমে ফিরে এসেছে তাদের সেই ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলও গঠন করেছে। এই সব কিছু অবশ্যই দুর্ঘটনাবশত হয় নি। ইয়াজুজ মাজুজই তাদেরকে পবিত্রভূমিতে ফিরিয়ে এনেছে। ব্রিটেন, ফ্রান্স ও আমেরিকার ইহুদি খ্রিস্টান এলায়েন্স ইসরাইলকে লালন পালন করে আজকের ইসরাইলে পরিণত করেছে।

ইয়াজুজ মাজুজকে চেনার আরেকটি পদচিহ্ন হল তারা সি অফ গ্যালিলি বা তাবারিয়া হ্রদের পানি খেয়ে নিঃশেষ করে ফেলবে। ইসরাইলের তাবারিয়া হ্রদ এখন শুকিয়ে চর হয়ে গেছে। কে সেই পানি নিঃশেষ করছে? ইসরাইলের খাযাররাই তা করছে। এই হ্রদের পানি যখন একদম শেষ হয়ে যাবে তখনই ঈসা (আঃ) নেমে আসবেন।
সুতরাং এই হাদিসটি বোঝা এখন আর কঠিন নয়। “লোকেরা ইয়াজুজ ও মাজুজের মুক্তির পরও কাবাতে হজ্ব এবং উমরাহ পালন করতে থাকবে” (সহিহ বুখারি)।

রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর জীবদ্দশাতেই ইয়াজুজ মাজুজ পৃথিবীতে মুক্তি পেয়ে যায়। যায়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ”একবার নবী‎জি (সঃ) ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় তাঁর নিকট আসলেন এবং বলতে লাগলেন, লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আরবের লোকেদের জন্য সেই অনিষ্টের কারণে ধ্বংস অনিবার্য যা নিকটবর্তী হয়েছে। আজ ইয়াজুজ ও মাজুজের প্রাচীর এ পরিমাণ খুলে গেছে। এ কথা বলার সময় তিনি তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলির আগ্রভাগকে তার সঙ্গের শাহাদাত আঙ্গুলির অগ্রভাগের সঙ্গে মিলিয়ে গোলাকার করে ছিদ্রের পরিমাণ দেখান। যায়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ) বলেন, তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে পুণ্যবান লোকজন থাকা সত্ত্বেও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাব? তিনি বলেন, হ্যাঁ যখন পাপকাজ অতি মাত্রায় বেড়ে যাবে।” (সহিহ বুখারি)। ইয়াজুজ মাজুজের দেয়াল যেখানে অবস্থিত সেখান থেকেই খাযাররা বের হয়েছে। দেয়ালটি কোথায় অবস্থিত সেটা জানতে হলে এখানে ক্লিক করুন।

ট্যাগ
খাযার, বনী ইসরাইল, তাবারিয়া হ্রদ, ইহুদি, ইয়াজুজ মাজুজ pdf, ইয়াজুজ মাজুজ কোথায় আছে, ইয়াজুজ মাজুজ কারা এরা কোথায় আছে এবং যে ভাবে আবির্ভাব হবে, জুলকারনাইন ও ইয়াজুজ মাজুজ, জুলকারনাইনের প্রাচীর, ইয়াজুজ মাজুজ মোঙ্গল, বাদশাহ জুলকারনাইন, সাইরাস দি গ্রেট, আখেরী জামানা, জেরুজালেম

 

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান