রিলিজিয়াস সিম্বলিজম ও কেয়ামতের নিদর্শন


সিম্বল হল প্রতীক বা চিহ্ন যা কোন বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা বা ইঙ্গিত প্রদান করে। একটি সিম্বল যে বিষয়ের প্রতিনিধিত্ব করছে তা সম্পর্কে জানতে পারা যায় সিম্বলটিকে ব্যাখ্যা করার মাধ্যমে। পৃথিবীর সমস্ত ধর্মেই সিম্বলিক ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করা হয়েছে। ইসলামও এর ব্যতিক্রম নয়। ইসলামী জ্ঞানের মূল উৎস কোরআন ও হাদিসের অসংখ্য জায়গায় রিলিজিয়াস সিম্বলিজমের উল্লেখ রয়েছে। একটি উদাহরণ বিষয়টিকে পরিষ্কার করবে –
“যখন ইউসুফ পিতাকে বললঃ পিতা, আমি স্বপ্নে দেখেছি এগারটি নক্ষত্রকে। সূর্যকে এবং চন্দ্রকে। আমি তাদেরকে আমার উদ্দেশে সেজদা করতে দেখেছি।” – (সূরা ইউসুফঃ ৪)

ইউসুফ (আঃ) স্বপ্নে দেখলেন এগারটি নক্ষত্র, সূর্য ও চন্দ্র তাঁর সামনে সেজদাবনত হচ্ছে। পরবর্তীতে তাঁর জীবদ্দশায় এই স্বপ্ন সত্য প্রমাণিত হয়। কিন্তু সেটা হয়েছিল এভাবে –
“এবং তিনি পিতা-মাতাকে সিংহাসনের উপর বসালেন এবং তারা সবাই তাঁর সামনে সেজদাবনত হল। তিনি বললেনঃ পিতা এ হচ্ছে আমার ইতিপূর্বেকার স্বপ্নের বর্ণনা। আমার পালনকর্তা একে সত্যে পরিণত করেছেন এবং তিনি আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন।” – (সূরা ইউসুফঃ ১০০)

ইউসুফ (আঃ) এর এগার ভাই, তাঁর পিতা ও তাঁর মাতা তাঁর সামনে সেজদাবনত হন। এভাবেই স্বপ্নটি বাস্তবায়িত হয়। তাঁর স্বপ্নে দেখা এগারটি নক্ষত্র তাঁর এগার ভাইকে এবং সূর্য ও চন্দ্র তাঁর পিতা-মাতাকে সিম্বলাইজ করে। এটাই হল রিলিজিয়াস সিম্বলিজম। আমরা মুসলিমরা সবাই এর সাথে কম বেশি পরিচিত।

কোরআনে দুই ধরণের আয়াত রয়েছে – মুহকামাত ও মুতাশাবিহাত। মুহকামাত আয়াতগুলোর অর্থ একেবারে স্পষ্ট ও পরিষ্কার। মুতাশাবিহাত আয়াতগুলোর অর্থ সিম্বলিক, ফলে একে রিলিজিয়াস সিম্বলিজমের আলোকে ব্যাখ্যা করতে হয়। হাদিসের মধ্যেও মুহকামাত মুতাশাবিহাত বিদ্যমান। তবে সাধারণ নিয়ম হল এই যে, কোরআনের কোন আয়াত বা কোন হাদিস যতক্ষণ না সিম্বলিকভাবে ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন হয় ততক্ষণ একে আক্ষরিকভাবেই গ্রহন করতে হবে।

কেয়ামতের অনেক নিদর্শন বিশেষ করে দাজ্জালের বিষয়টি রিলিজিয়াস সিম্বলিজমের মধ্যে গোপন রাখা হয়েছে। এবার দেখে নেয়া যাক রিলিজিয়াস সিম্বলিজমের আলোকে কেয়ামতের কয়েকটি নিদর্শনের ব্যাখ্যা –
* “দাজ্জাল এক চোখ দিয়ে দেখে। তার ডান চোখ অন্ধ। তার কপালে কাফের লেখা থাকবে যা মুমিন ব্যক্তি ছাড়া কেউ পড়তে পারবে না; সে মুমিন ব্যক্তি লেখাপড়া জানুক বা না জানুক” – দাজ্জালের ডান চোখের অন্ধত্ব হল আধ্যাত্মিক অন্ধত্ব। তার বাম চোখ হল বাহ্যিক দৃষ্টিশক্তি। দাজ্জালের অনুসারীরা তার মতই আধ্যাত্মিকভাবে অন্ধ হবে। মুমিন ব্যক্তি আধ্যাত্মিক অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দাজ্জালের কপালের কাফের লেখা পড়তে সক্ষম হবে।
* “পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় হবে” – কোরআনের এক জায়গায় বলা হয়েছে “নিশ্চয়ই তিনি সূর্যকে উদিত করেন পূর্ব দিক থেকে” এবং অন্যত্র বলা হয়েছে “আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই”। তাই হতে পারে আক্ষরিক অর্থেই সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উঠবে না বরং জ্ঞান-বিজ্ঞান-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামরিক শক্তি মোটকথা সভ্যতার সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উঠবে। যাকে আমরা বলি “আধুনিক পশ্চিমা সভ্যতা” বা “মডার্ন ওয়েস্টার্ন সিভিলাইজেশন”।
* “দাব্বাতুল আরদ” – আরদ অর্থ ভূমি। আর আখিরি জমানার প্রসঙ্গে যখনই আরদ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে তখন দশ বারের মধ্যে নয় বারই এটি নির্দেশ করে “আল আরদুল মুকাদ্দাসা” বা “পবিত্রভূমি”। পবিত্রভূমি থেকে একটি পশু বের হয়ে আসবে অর্থাৎ পবিত্রভূমি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ও নৃশংস একটি পশুর ন্যায় আচরণ করবে। পবিত্রভূমিতে অবস্থিত আজকের ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলই হল দাব্বাতুল আরদ বা ভূমির জন্তু।
* “ইয়েমেন থেকে একটি আগুন বেরিয়ে আসবে এবং তা মানুষকে হাশরের ময়দানের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে” – যে আগুন দিয়ে আমরা রান্নাবান্না করি আক্ষরিক অর্থেই সেরকম কোন আগুন বেরিয়ে আসবে না। এটা হবে বিদ্রোহের আগুন। হতে পারে সৌদি জোটের ইয়েমেন হামলা ঘটনাপ্রবাহকে সেদিকেই ধাবিত করছে।
* “ঈসা (আঃ) ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলবেন” – ঈসা (আঃ) সত্যিই ক্রুশ হাতে নিয়ে ভাঙ্গা শুরু করবেন না; বরং খ্রিষ্টান ধর্মের বিলুপ্তি ঘটবে। ঈসা (আঃ) সম্পর্কে যেসব ভুল বিশ্বাস মানুষের ছিল তা দূরীভূত হবে এবং মুহাম্মদ (সঃ) যে সত্য নিয়ে এসেছেন মানুষ তার উপর ঈমান আনবে।
* “ফোরাত নদীর নীচ থেকে একটি স্বর্ণের পাহাড় বের হবে” – এখানে “স্বর্ণ” অর্থ মহামূল্যবান সম্পদ আর “পাহাড়” অর্থ বিপুল পরিমাণ। ফোরাত নদীর নীচ থেকে প্রচুর পরিমাণ মহামূল্যবান সম্পদ বের হবে যা স্বর্ণের স্থান দখল করবে। মধ্যপ্রাচ্যে আবিষ্কৃত তেল হল সেই সম্পদ।
* “দাজ্জাল উড়ন্ত গাধার পিঠে চলবে যা হবে আকাশের মেঘের মত দ্রুতগতিসম্পন্ন। গাধার কানগুলো বিশাল দূরত্ব পর্যন্ত ছড়ানো থাকবে” – দাজ্জালের উড়ন্ত গাধা হল মডার্ন এয়ারক্র্যাফট বা উড়োজাহাজ।

ট্যাগ

দাজ্জাল কোথায় আছে, দাজ্জাল এর আগমন, দাজ্জাল সম্পর্কে হাদীস, দাজ্জাল এর ভিডিও, দাজ্জাল বই, দাজ্জাল ও তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ, দাজ্জাল pdf, গারকাদ গাছ, সিম্বল, সিম্বলিজম, রিলিজিয়াস, আখেরী জামানা, কেয়ামতের নিদর্শন

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান